বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি আরও বেশি ক্ষমতাশালী হতে পারে “Root” করার মাধ্যমে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব রুট কি, কেন রুট করব, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং কিভাবে নিরাপদে রুট করা যায়।
অ্যান্ড্রয়েড রুট কী?
রুট শব্দটির ইংরেজি হলো Root Access, যার অর্থ হলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। রুট করার মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসের সিস্টেম ফাইলগুলোতে অ্যাক্সেস পেতে পারেন এবং ইচ্ছেমত পরিবর্তন করতে পারেন। এটি অনেকটা কম্পিউটারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পারমিশন পাওয়ার মতো।
রুট করার সুবিধা
- সিস্টেম অ্যাপ রিমুভ: আপনি প্রি-ইনস্টলড bloatware অ্যাপগুলো সহজেই আনইনস্টল করতে পারবেন।
- কাস্টম রম ইনস্টল: রুট করার পর আপনি চাইলে LineageOS, Pixel Experience ইত্যাদি কাস্টম রম ব্যবহার করতে পারবেন।
- ব্যাটারি ও পারফরম্যান্স টিউনিং: ফোনের CPU, GPU-এর গতি কাস্টমাইজ করে আপনি ব্যাটারি ব্যাকআপ বা পারফরম্যান্স বাড়াতে পারেন।
- অ্যাড-ব্লকার: সিস্টেম লেভেল অ্যাড ব্লকার যেমন AdAway ব্যবহার করে অ্যাপ বা ব্রাউজারে বিজ্ঞাপন পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবেন।
- ব্যাকআপ সুবিধা: Titanium Backup এর মতো অ্যাপ দিয়ে পুরো ফোনের ডাটা ও অ্যাপসহ ব্যাকআপ ও রিস্টোর করা যায়।
রুট করার অসুবিধা
- ওয়ারেন্টি বাতিল: অনেক মোবাইল কোম্পানি রুট করার পর ওয়ারেন্টি বাতিল করে দেয়।
- সিকিউরিটি ঝুঁকি: রুট করার মাধ্যমে হ্যাকার বা ম্যালওয়্যার অ্যাপ আপনার সিস্টেম ফাইলে প্রবেশ করতে পারে।
- OTA আপডেট বন্ধ: রুট করলে অনেক সময় ফোনের অফিসিয়াল সফটওয়্যার আপডেট আর পাওয়া যায় না।
- ব্রিক হওয়ার সম্ভাবনা: ভুলভাবে রুট করলে ফোন “ব্রিক” হয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ ফোন চালু না-ও হতে পারে।
রুট করার আগে যা জানা জরুরি
- আপনার ফোনের মডেল ও অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের সাথে কম্প্যাটিবল রুট মেথড খুঁজে বের করুন।
- USB Debugging ও OEM Unlocking অন করতে হবে (Settings > Developer options)।
- ব্যাকআপ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — যেন রুটের সময় কিছু হলে ডাটা হারিয়ে না যায়।
রুট করার জনপ্রিয় পদ্ধতি
রুট করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও নিরাপদ উপায় উল্লেখ করা হলো:
১. Magisk ব্যবহার করে রুট
বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ রুট পদ্ধতি হলো Magisk:
- আপনার ফোনের Bootloader Unlock করতে হবে।
- Custom Recovery (যেমন TWRP) ইনস্টল করুন।
- Magisk Zip ফাইল ডাউনলোড করে TWRP থেকে ফ্ল্যাশ করুন।
- রিবুট করার পর Magisk App দিয়ে রুট স্টেটাস চেক করতে পারবেন।
২. One-click Root App (কিছু পুরাতন ফোনের জন্য)
পুরানো অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের কিছু ফোনের ক্ষেত্রে KingRoot, iRoot বা Framaroot ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলো সব ফোনে কাজ নাও করতে পারে এবং সিকিউরিটি ঝুঁকি বেশি থাকে।
কীভাবে রুট স্টেটাস চেক করবেন?
আপনার ফোন রুট হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে Root Checker নামক অ্যাপটি Google Play Store থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
রুট করার পর যা করবেন
- Magisk এর মাধ্যমে SafetyNet bypass করুন, যেন Google Pay, Banking App চালু থাকে।
- App থেকে রুট হাইড করতে Magisk Hide ব্যবহার করুন।
- Systemless Hosts Module একটিভ করে AdAway ইনস্টল করুন বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে।
রুট না করেও অনেক কিছু সম্ভব
অনেক ব্যবহারকারীর রুট করার মূল উদ্দেশ্য থাকে বিজ্ঞাপন বন্ধ, স্টোরেজ খালি করা, বা থিম কাস্টমাইজ করা। আজকাল এসব কাজ অনেকটা রুট ছাড়াও করা যায়:
- Blokada: বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ।
ডাউনলোড: https://blokada.org/
- DNS66: ওপেন সোর্স অ্যাড ব্লকার, যেটি DNS ফিল্টারিং ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন ব্লক করে।
ডাউনলোড (F-Droid): https://f-droid.org/packages/org.jak_linux.dns66/
- ADB AppControl: পিসির মাধ্যমে অ্যাপ আনইনস্টল বা ডিসেবল করার জন্য।
ডাউনলোড: https://adbappcontrol.com/en/
- Good Lock (Samsung): থিম কাস্টমাইজেশনের জন্য Samsung এর অফিসিয়াল অ্যাপ।
ডাউনলোড: Play Store লিংক (কেবল Samsung ডিভাইসে কাজ করে)
উপসংহার
রুট করা একটি পাওয়ারফুল কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। আপনি যদি প্রযুক্তিতে একটু অভিজ্ঞ হন এবং বুঝে শুনে রুট করেন, তাহলে এটি আপনাকে অসাধারণ সুবিধা দিতে পারে। তবে অযথা রুট করার দরকার নেই যদি আপনি শুধু সাধারণ ব্যবহারকারী হন। সবশেষে, রুট করার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করুন এবং নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত নিন।
আশা করি এই গাইডটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। রুট সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন!