আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করি। গুগল করে তথ্য খুঁজি, ফেসবুকে সময় কাটাই, ইউটিউবে ভিডিও দেখি। কিন্তু আপনি কি জানেন, আমরা ইন্টারনেটের খুবই অল্প একটা অংশ ব্যবহার করি? আপনি যেটা ব্যবহার করছেন সেটা হলো Surface Web, আর এর নিচে আছে বিশাল এক অজানা জগৎ যার নাম Deep Web। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা একদম বিগিনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বুঝে নেব, ডিপ ওয়েব কী, কেন এটা তৈরি হয়েছে, কিভাবে কাজ করে এবং এটি কতটা নিরাপদ বা বিপজ্জনক।
ডিপ ওয়েব কী?
ডিপ ওয়েব (Deep Web) হলো সেইসব ওয়েবসাইট বা তথ্যের সংগ্রহ, যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন (যেমন Google, Bing, Yahoo) দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলো থাকে পাসওয়ার্ড-প্রোটেক্টেড, ডাটাবেস-ভিত্তিক বা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কে।
উদাহরণ:
- আপনার ইমেইল ইনবক্স
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য
- প্রাইভেট ফোরাম বা ডকুমেন্ট
- মেডিকেল রেকর্ডস
- ইউনিভার্সিটির গবেষণা রিপোর্ট যা পাবলিক নয়
এগুলো কোনো অবৈধ কিছু না। বরং এগুলো হলো আমাদের প্রাইভেট বা গোপনীয় তথ্য যেগুলো সার্চ ইঞ্জিনের ইনডেক্সে রাখা হয় না, আমাদের নিরাপত্তার জন্য।
ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েবের পার্থক্য
অনেকেই ডিপ ওয়েব আর ডার্ক ওয়েবকে এক মনে করেন। কিন্তু তারা এক না।
বিষয় | ডিপ ওয়েব | ডার্ক ওয়েব |
---|---|---|
উপলব্ধতা | প্রাইভেট, কিন্তু বৈধ | অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে |
সার্চ ইঞ্জিন | ইনডেক্স করে না | ইনডেক্স করে না |
অ্যাক্সেস | লগইন/প্রাইভেট এক্সেস প্রয়োজন | TOR ব্রাউজার বা বিশেষ টুলস দরকার |
বৈধতা | সম্পূর্ণ বৈধ | অনেকাংশে অবৈধ (যেমন: ড্রাগ বিক্রি, হ্যাকিং) |
ডিপ ওয়েব কত বড়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো ইন্টারনেটের মাত্র ৪%-৫% হলো সারফেস ওয়েব। বাকি ৯৫% এর বেশি তথ্য থাকে ডিপ ওয়েবে।
একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝি:
ইন্টারনেট যদি একটা বরফের পর্বত (Iceberg) হয়, তাহলে উপরের যে ছোট অংশটা পানির ওপরে দেখা যায় সেটাই Surface Web। আর পানির নিচে যে বিশাল অংশটা দেখা যায় না, সেটাই Deep Web (আর তার নিচের গা-ছমছমে অংশটা Dark Web)।
কেন এত কিছু গোপন রাখা হয়?
এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি। যেমন:
- ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য সার্বজনীন করলে হ্যাকাররা সহজেই অ্যাক্সেস পাবে।
- আপনার পার্সোনাল ইমেইল সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করলে যেকোনো কেউ পড়তে পারবে।
- গবেষণা তথ্য প্রকাশ না করলে তা কপি বা চুরি হওয়া থেকে বাঁচে।
তাই এসব কিছুই থাকে ডিপ ওয়েবের গভীরে, নিরাপদে।
কিভাবে ডিপ ওয়েবে অ্যাক্সেস করা যায়?
সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ডিপ ওয়েবে ঢোকা খুবই সহজ, কারণ আমরা প্রতিদিনই ঢুকি! আপনি যখন আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করেন, আপনি ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করছেন।
অর্থাৎ, যেসব ওয়েবসাইট পাসওয়ার্ড চায়, ইউজারনেম চায়, প্রাইভেট সার্ভারে থাকে—এসবই ডিপ ওয়েব।
কিন্তু সাবধান: ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে গেলে অবশ্যই স্পেশাল ব্রাউজার লাগে, যেমন TOR। এবং সেখানে নিরাপত্তার ঝুঁকি অনেক বেশি।
ডিপ ওয়েব কি বিপজ্জনক?
না, ডিপ ওয়েব নিজে কোনো বিপজ্জনক কিছু না। বরং এটা খুবই দরকারি এবং নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিদিনই ডিপ ওয়েব ব্যবহার করি, কিন্তু বুঝি না।
যা বিপজ্জনক: সেটা হলো ডার্ক ওয়েব। কারণ সেখানে অবৈধ কার্যকলাপ চালানো হয় এবং অনেক সময় হ্যাকাররা ফাঁদ পেতে বসে থাকে।
উপসংহার
ডিপ ওয়েব হলো আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রাচীর। এটি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে রাখে গোপন ও সুরক্ষিত। এটা কোনো হ্যাকিং জোন না, বরং প্রাইভেসির নিরাপদ স্থান।
তবে একে ডার্ক ওয়েবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা একদম ঠিক না।
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন, ডিপ ওয়েব কী, কীভাবে কাজ করে, কেন দরকার, আর কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত দিন
এই আর্টিকেলটি কেমন লাগলো? কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানান। আপনি যদি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কেও একটি গাইড চান, সেটাও কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!