
নতুন গ্যাস সংযোগ নেই সংকটে পণ্য পরিবহনও
সারাদেশ
সৌরভ হাবিব, রাজশাহী <time class="op-modified" dateTime="2024-12-26"2024-12-26
2024-12-26
গ্যাস সংযোগ ও পণ্য রপ্তানির সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অতি রুগ্ণ হয়ে আছে রাজশাহী বিসিকের শিল্পকারখানাগুলো। ২০১৪ সালের পর থেকে বিসিকের কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। এর আগে ৩৫০ শিল্পকারখানার মধ্যে ১৮টিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তা গ্যাস চেয়ে তখন থেকেই আবেদনসহ সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ করেও গ্যাস পাননি। ফলে তাদের উচ্চমূল্যে সিলিন্ডার কিনে উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে লোকসানে পড়ছেন অনেকেই। উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস সংযোগ এবং রেল, নৌ ও আকাশপথে পণ্য রপ্তানির সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন।
রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান। তিনি ২০০২ সালে ২৪ কোটি টাকায় এমএইচ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড নামের কোম্পানি গড়ে তোলেন। মিনারেল ওয়াটার, বিস্কুট, জুস, লজেন্স, ম্যাংগো বার উৎপাদনের জন্য করা হয়েছিল কারখানাটি। কিন্তু ২০১৪ সালে আবেদন করে টাকা জমা দিয়েও গ্যাস সংযোগ পাননি। হাফিজুর রহমান জানান, পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস সংযোগ না পেয়ে সিলিন্ডার গ্যাস কিনে কারখানাটি কোনো রকম চালু রাখা হয়েছে। সংযোগ পেলে তাঁর মাসে বিল আসত ৩০ হাজার টাকা। সিলিন্ডার গ্যাস কিনে উৎপাদন করতে মাসে গ্যাস বিল আসছে ৩ লাখ টাকা। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। লোকসান দিয়ে কোম্পানি টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। যে পরিমাণ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা পূরণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে গ্যাস সংযোগের আবেদন করি। সিকিউরিটি মানির বিডি জমা দিয়েছি। গ্যাসের লাইন টানা হয়েছিল। আমরা কোম্পানি ওয়্যারিং করেছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ১৫ দিন পর বলা হলো, বিডি ফেরত নিতে হবে। এখন সংযোগ দেওয়া যাবে না। তখন থেকেই অপেক্ষা করছি। কিন্তু সংযোগ পাইনি।’ তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ পেলে দিনে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকার গ্যাসে উৎপাদন হতো। এখন দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়। গ্যাস সংযোগ থাকলে মাসে বিল আসত মাত্র ৩০ হাজার। এখন গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে মাসে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। গ্যাস না পেয়ে রাজশাহী বিসিকের অনেক উদ্যোক্তা লোকসান দিয়ে কোম্পানি বন্ধ করে ফেলেছেন। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থাও মুমূর্ষু।
বিসিকের এডভেন্ট বিডি কোম্পানির মালিক মোখলেছুর রহমান মুসা তাঁর কোম্পানিতে ম্যাংগো বার তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ থাকলে আমার প্রতি মাসে খরচ হতো ১০ হাজার টাকা। এখন সিলিন্ডার কিনে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা।’
রাজশাহী বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিক-২ হচ্ছে রাজশাহীতে। সেখানে সব শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ থাকবে। বিসিক-১ অনেক পুরোনো, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখানেও গ্যাস থাকার কথা। আমরা গ্যাস কোম্পানির কাছে লিখব যেন বিসিক-১-এ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসের ব্যবস্থাপক বরকত হোসেন মোল্লা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ আছে। তবে ২০১৮ সাল থেকে বিসিকের শিল্পকারখানায় আবারও গ্যাস সংযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর বিসিকের স্টার ঢালাই কারখানা নামের প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক (রাজস্ব) আশরাফুল হক বলেন, রাজশাহী নগরীর ৯ হাজার আবাসিক, ১৮টি শিল্প, একটি সিএনজি স্টেশনসহ সব মিলিয়ে ১০ হাজার সংযোগ দেওয়া আছে। এ থেকে মাসে সাড়ে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আসে।
পণ্য পরিবহন সংকট
রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গ্যাস সংযোগের বাইরে আরও একটি বড় সমস্যা তারা মোকাবিলা করছেন। তা হলো– দেশ-বিদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য সহজ কোনো ব্যবস্থা নেই। রাজশাহীতে নদী বা সমুদ্রবন্দর নেই। পণ্য পরিবহনে কোনো কার্গো বিমানও নেই। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ নেই। নদী, রেল ও আকাশপথ কোনোটারই ব্যবস্থা না থাকায় শিল্পগুলো সতেজ হতে পারছে না।
রাজশাহী রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘শিল্পকে বাঁচাতে হলে নদী, রেল এবং আকাশপথে পণ্য রপ্তানির সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি করতে হবে। রাজশাহীতে পদ্মা নদী আছে। এখানে ড্রেজিং করে একটি নৌবন্দর করা যেতে পারে। রাজশাহী বিমানবন্দরকে আরও বড় করে কার্গো বিমান চালু করতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরের সঙ্গে রাজশাহী থেকে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু করতে হবে। রাজশাহী থেকে আবদুলপুর মিটারগেজ রেললাইন নেই। এটুকু মিটারগেজ করলে রাজশাহী-চট্টগ্রাম পর্যন্ত সরাসরি পণ্যবাহী ট্রেন চালু করতে পারবে। এর সঙ্গে বিসিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিসিকের ড্রেনগুলো অকেজো, পানি সরবরাহ হয় না। সারা বছরই পানি জমে থাকে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যায়। সড়কবাতি জ্বলে না। চারদিক থেকে লোক ঢুকে চুরি-ছিনতাই করে। মালপত্রও নিরাপদ নয়।
বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। পর্যায়ক্রমে উদ্যোক্তাদের সমস্যা শুনে সমাধান করা হবে।’