
যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করে ৩ কিশোরীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
সারাদেশ
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 2025-01-11
ময়মনসিংহের যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করে তিন কিশোরীকে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ওই তিন কিশোরীকে উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরী ঝর্ণার (ছদ্মনাম) পরিবারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তাই স্বপ্ন দেখেন নিজে টাকা রোজগারের। দুই বছর আগে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে রংপুর মহানগরীর বাসা থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে ঢাকায় যান। সেখানে সাগর নামে এক যুবকের খপ্পরে পড়েন ঝর্ণা। ওই যুবক তাকে বেশি বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যান। এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি পান করিয়ে অজ্ঞান করে ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকার রমেশ চন্দ্র সেন রোডের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেন।
একইভাবে খপ্পরে পড়ে আরও দুই কিশোরী। এদের মধ্যে একজনের নাম জবা (ছদ্মনাম) ও আরেকজনের নাম তিথি (ছদ্মনাম)। তাদের সুখের সংসার থাকলেও বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পরই ওই দুই কিশোরী সৎ মায়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চাকরির পরিকল্পনা করেন।
জবা ২০২৩ সালের আগস্টে রংপুরের বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে এক ব্যক্তির খপ্পরে পড়েন। বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই ব্যক্তি তাকে ময়মনসিংহ যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেন।
অপরদিকে তিথি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বরিশালে গ্রামের বাড়ি থেকে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় এলে তাকেও এক ব্যক্তি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে ময়মনসিংহে এনে টাকার বিনিময়ে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকেই ওই তিন কিশোরীর জীবন কাটতে থাকে ওই যৌনপল্লীতে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, যৌনপল্লীতে যারা নিয়ে এসে বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে তিন কিশোরী কোনও অভিযোগ করেননি। এসময় পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের (কিশোরী) ভালো রাখার আশ্বাস দেন।
তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশ জানায়, কিশোরী ঝর্ণা যৌনপল্লী থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিলেন না। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সুকৌশলে তার মায়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। যৌনপল্লীতে আসার ঘটনাটি মা-বাবাকে খুলে বলে। এমতাবস্থায় তার বাবা-মা মেয়েকে ফেরত নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওদিনই গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌনপল্লীতে গিয়ে ঝর্ণাসহ আরও দুই কিশোরীরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, কোনও মেয়ে পরিবারের লোকজন ছাড়া দূরে কোথাও গেলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা না হলে, এসব কিশোরীর মতো অন্য যে কারও জীবনে অন্ধকার নেমে আসতে পারে।