৫৩ দিনেও মেলেনি ধান, চালে ধীরগতি

৫৩ দিনেও মেলেনি ধান, চালে ধীরগতি

সারাদেশ

মাজহারুল আলম মিলন, পীরগঞ্জ (রংপুর)

2025-01-20

খাদ্যগুদাম ধান কিনছে প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ টাকা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ১ হাজার ৩২০ টাকা মণ দরে বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গুদামে মিটার পাস করে ধান দিতে হয়। এমন নানান কারণে গুদামে ধান দিতে কৃষকের আগ্রহ নেই। কথাগুলো রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মিলনপুরের কৃষক মশিয়ার রহমান জাদু ও কুমারগাড়ীর মকবুল হোসেনের। দাম কমতে শুরু করেছে, এমন ভাবনা থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সময় শেষের আগে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র কিছুটা পূরণ হবে বলে আশা কর্মকর্তাদের।
উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ও পীরগঞ্জ এলএসডি খাদ্যগুদামে গত ২৮ নভেম্বর ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ৫৩ দিনে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। মশিয়ার ও মকবুলের মতো কৃষকরা গুদামে যেতে আগ্রহ দেখাননি। কৃষকের বাড়ি থেকেই ক্রেতারা ধান সংগ্রহ করায় গতকাল রোববার বালুয়াহাটের ধানহাটা ক্রেতা-বিক্রেতাশূন্য দেখা যায়। অথচ এদিন ছিল হাটবার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে দুটি গুদামে ১ হাজার ৬৫৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ লোকবল দিয়ে ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। তবুও সাড়া মেলেনি। খোলাবাজারের চেয়ে সরকারি গুদামে দাম কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি বলে মত সংশ্লিষ্টদের। 
এ সময় চাল সংগ্রহেও আশার খবর নেই। চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য সাতটি অটো রাইসমিলসহ ৫৬টি হাসকিং চাতালের সঙ্গে খাদ্যগুদামের চুক্তি হয়েছে। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ এ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৪৩ টন। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৮১০ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ও পীরগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না হলেও চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমুল্য কুমার সরকারের। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮১০ টন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। সরকারিভাবে চালের কেজি ৪৭ এবং ধানের দাম ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার চাতাল মালিকরা বলছেন, সরকারিভাবে ধান ক্রাসিংয়ে অটো রাইস মিল মালিকদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এতে হাসকিং চাতাল ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হয়েছেন। ২০১৮ 
সালে উপজেলায় ২১০টি হাসকিং চাতাল ছিল। বর্তমানে রয়েছে ৯৮টি। বরাদ্দ না পাওয়ায় দিন 
দিন ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ বাড়ায় অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
খোলাবাজারে প্রতি কেজি ধান ৩৬ থেকে ৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খাদ্যগুদামে ধান দিতে কৃষককে আগে আবেদন করতে হয়। সরকারি দর ৩৩ টাকা। সাধারণ কৃষক, খুচরা ব্যবসায়ী এবং চাতাল মালিকরা লোকসান করে তো গুদামে ধান দেবেন না। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। যাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তারা জরিমানা ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি ঠিক রাখতে লোকসানেও চাল দেবেন।  
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাতাল মালিকের ভাষ্য, অনেকে দীর্ঘদিন কোনো বরাদ্দ পাননি। ব্যবসা না থাকায় ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় চাতাল বন্ধ করে দিয়েছেন। অতীতে সরকারের লোকজনের সঙ্গে অটো রাইসমিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সব বরাদ্দ নিয়ে গেছেন। দলীয় প্রভাবের কারণে বরাদ্দে বৈষম্য ছিল। এতে 
হাসকিং চাতাল মালিকরা বঞ্চিত হয়েছেন। বর্তমানে সরকারি দর খোলাবাজারের চেয়ে কম। সে কারণে ধান সংগ্রহ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে ধানের দাম কমে আসছে। এতে খাদ্যগুদামে ধান আসবে, এখনও সময় আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি রয়েছে, তাই চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply